ইন্টারনেটের ভর কত?

 আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তার ভর মাত্র ৫০ গ্রাম!?

আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করি, কিন্তু কখনও কি ভেবেছি—এর আসল ভর কত?


প্রায় ১৪ বছর আগে ২০১১ সালে, এক গণিতবিদ গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন, একটি ইবুক রিডারে (যেমন কিন্ডল) নতুন বই সংরক্ষণ করলে সেটির ওজন সামান্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়! এর কারণ হলো, তথ্য সংরক্ষণের সময় ইলেকট্রনের শক্তি বৃদ্ধি পায় আর এই অতিরিক্ত শক্তির সামান্য ভর থাকে।


একটি কিন্ডলে নতুন বই যুক্ত করলে ভর এত সামান্য পরিমাণে বাড়ে যে, এটি যখন চার্জ দেওয়া হয় তখন যে ভর বাড়ে তার তুলনায় ১০ কোটিগুণ কম! অর্থাৎ, চার্জ দেওয়ার সময় যে পরিবর্তন হয়, তার তুলনায় তথ্য সংরক্ষণের কারণে ভর বৃদ্ধি একেবারেই নগণ্য। এই ধারণা ব্যবহার করে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব বিজ্ঞান চ্যানেল Vsauce পুরো ইন্টারনেটের ওজন হিসাব করেছে। Vsauce-এর গবেষণা অনুসারে, পুরো ইন্টারনেটের ভর মাত্র ৫০ গ্রাম—যা একটি বড় স্ট্রবেরির ওজনের সমান! কিন্তু এটি আসলে ইন্টারনেটে সংরক্ষিত তথ্যের ভর নয়। এটি হলো ইন্টারনেট চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের ইলেকট্রনগুলোর সম্মিলিত ভর।


এই গবেষণায় ধরে নেওয়া হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৭৫ থেকে ১০০ মিলিয়ন সার্ভার ইন্টারনেট চালিয়ে রাখছে। তবে, ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। পুরো ইন্টারনেট চালাতে আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন ওয়াট শক্তি ব্যয় হয়। আর এই বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে যে ইলেকট্রনগুলো প্রবাহিত হয়, তাদের সম্মিলিত ভর একটি বড় স্ট্রবেরির সমান! যদি ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলোকেও এই হিসাবের মধ্যে ধরা হয়, তাহলে ইন্টারনেটের মোট ভর দাঁড়াবে তিনটি বড় স্ট্রবেরির সমান! যদি শুধু ইন্টারনেটে সংরক্ষিত তথ্যের ভর ধরা হয় তাহলে সেটি হবে আরও অবিশ্বাস্যভাবে ছোট।ইন্টারনেটে আসলে কত তথ্য আছে, তা জানা কঠিন। তবে ইউটিউব চ্যানেল Vsauce গুগলের সাবেক সিইও এরিক শ্মিটের একটি পুরনো অনুমান ব্যবহার করেছে।এরিক শ্মিট অনুমান করেছিলেন, পুরো ইন্টারনেটে ৫ মিলিয়ন টেরাবাইট তথ্য রয়েছে। আর এর মধ্যে গুগল মাত্র ০.০৪% ইনডেক্স করতে পেরেছে। Vsauce-এর গণনা অনুসারে, ইন্টারনেটে সংরক্ষিত সমস্ত তথ্যের মোট ওজন মাত্র ০.০২ মিলিয়নথ (লক্ষভাগের এক ভাগ) আউন্সের সমান! অর্থাৎ, পুরো ইন্টারনেটের তথ্যের ওজন ধুলোর একটি ক্ষুদ্র কণার চেয়েও কম!


আমরা প্রতিদিন কোটি কোটি তথ্য ব্যবহার করি, ভিডিও দেখি, ছবি আপলোড করি, কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো—এই বিশাল তথ্যভাণ্ডারের ওজন একেবারেই সামান্য! তবে, তথ্যের ওজন কম হলেও ইন্টারনেট চালাতে যে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা কিন্তু আমাদের পরিবেশের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এই গবেষণা আমাদের দেখায়, তথ্য কেবল মস্তিষ্কে বা যন্ত্রে সংরক্ষিত কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়, বরং এটি বাস্তব জগতে শক্তির পরিবর্তন ঘটিয়ে সামান্য হলেও ওজন সৃষ্টি করে। অতএব, এখন থেকে যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করবো, তখন একবার ভাবতে পারি—আমরা হয়তো স্ট্রবেরির ওজনের সমান ইলেকট্রন প্রবাহের ভেতর দিয়ে সংযুক্ত হচ্ছি!

No comments:

Post a Comment

ইন্টারনেটের ভর কত?

 আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি তার ভর মাত্র ৫০ গ্রাম!? আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করি, কিন্তু কখনও কি ভেবেছি—এর আসল ভর কত? প্রায় ১৪ বছর...