‘বিডিআর বিদ্রোহ’ নিয়ে আমার দেশ পত্রিকা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদক সৈয়দ আবদাল আহমদ তার প্রতিবেদনে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কারণ, এর মাস্টারমাইন্ড কে ছিলেন ও হাসিনা কাদের সাহায্য নিয়েছেন তিনি তা তুলে ধরেছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’, ঢাকায় আনা হয় প্রশিক্ষিত কিলার গ্রুপ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিক,
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তা।অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতীয় কিলার গ্রুপের একটি অংশকে খেলোয়াড় বেশে বিডিআরের একটি পিকআপে করে এবং আরেকটি অংশকে রোগী সাজিয়ে নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্সে করে পিলখানায় ঢোকানো হয়। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা পিলখানা ত্যাগও করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা ভারতীয় কিলার গ্রুপটিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।
এজন্য ফ্লাইটটি দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। আরও জানা গেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোকজন ও কিলার গ্রুপের সদস্যরা ফার্মগেটে অবস্থিত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করেছে। নাম-পরিচয় গোপন রেখে ইম্পেরিয়াল হোটেলে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। পিলখানায় সংঘটিত ঘটনা ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ হিসেবে চালানো হলেও এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সেনাপ্রধান হিসেবে বিডিআর হত্যা মোকাবেলা তথা সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। হত্যাকাণ্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেন না।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পিলখানার সিসি টিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করে দেন ঘটনার পরপর দায়িত্ব পাওয়া বিডিআর ডিজি লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি ও জাতীয় তদন্ত কমিটির তদন্ত অসম্পূর্ণ রাখা হয়। ওই তদন্ত কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতার নাম এলেও শেখ হাসিনা তাদের রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি এবং কমিটিতে এদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে দেওয়া হয়নি।
সেনা তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ওই তদন্ত সম্পর্কে। তিনি বলেন, তার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সম্পর্কে এ মুহূর্তে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ইতোমধ্যে তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন এবং সরকার বিডিআরের সাবেক ডিজি মো. জেনারেল আ ল ম ফজলুল রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। তিনি এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছেন। তিনি বলেন, তারা আশা করছেন বর্তমান কমিশন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ভারতীয় পরিকল্পনায় হয়েছে। শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে পারেন সেটা পাকাপোক্ত করার জন্য তার সঙ্গে বোঝাপড়া করেই পরিকল্পনা করা হয়।
ভারত দেখেছে তারা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যখনই কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে, তখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর জন্য তারা অনেক কিছুই করতে পারেনি। বিডিআর-এ সেনাবাহিনীর অফিসাররা কমান্ডে থাকায় সেখানে ভারতীয় বিএসএফ-এর ভূমিকা ম্লান ছিল। তাই তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনে এমন শক্তিশালী করবে যাতে সবকিছু তার হাতের মুঠোয় থাকে।
সেনাবাহিনী যাতে দুর্বল হয়ে যায়, বিডিআর নামে যাতে শক্তিশালী বাহিনী না থাকে- এ লক্ষ্যেই বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর আগে নীলনকশা অনুযায়ী বিডিআর সদস্যদের হাত করা হয়। তারা যাতে সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সেজন্য তথাকথিত ডাল-ভাত কর্মসূচি ও দুর্নীতির বিষয় এনে প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়।
চৌকস সেনা অফিসারদের হত্যার জন্য বিডিআর-এ বদলি করে এনে এক জায়গায় তাদের জড়ো করা হয়। এরপর তাদের হত্যা করা হয়। পদোয়া এবং রৌমারীর যুদ্ধে বিএসএফ হত্যার পর থেকেই বিডিআর ধ্বংসে নিয়োজিত হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। রৌমারীর ঘটনার নেতৃত্ব দেন রংপুরের তৎকালীন সেক্টর কমান্ডার পরবর্তী সময়ে বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। এরই ফল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকেসহ ৫৭ সেনাকর্মকর্তা হত্যা। //
"আমার দেশ কেন? বাকি পত্রিকাগুলো পারতো না এই খবর ছাপাতে হাসিনার পরে? পারতো, কিন্তু সবাই সম্ভবতঃ হাসিনার পয়সা খাওয়া, হাসিনার আমলে। অপরাধবোধ। নিজেদের ধরা খাবার ভয়।
আমাদের বর্তমান স্বরাষ্ট উপদেষ্টা কেন কিছু দিন আগে পর্যন্ত বলেছিলো : সবকিছু আমরা করবো কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত করবো না — উত্তর এখানে। উনার নাম আছে উপরে।"
- আবু হায়াত অপু
No comments:
Post a Comment