বাকশাল মানে বহুদলীয় ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন। গণতন্ত্র হত্যা। পছন্দের চারটা সংবাদপত্র রেখে বাকি সব নিষিদ্ধ। সরকারী চাকুরেদের বাধ্যতামূলক বাকশালে যোগদান।
শেখ মুজিব সংসদে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে বাকশাল কায়েম করেছিলেন। ২৯৪-০ ভোটে চতুর্থ সংশোধনী পাশ হয়। বিরোধিতার কোনো সুযোগ ছিল না। দুনিয়ার ইতিহাসে এত কম সময়ে কোনো সংশোধনী পাশের নজির নাই।
এমনকি শেখ মুজিবের স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও বাকশালের পক্ষে ছিলেন না। বাকশাল কায়েমের আগে আগে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের পারিবারিক আবহে কি কি ঘটছিল তা জানতে চাইলে শেখ হাসিনার হাজবেন্ড পরমাণু বিজ্ঞান এম এ ওয়াজেদ মিয়ার “বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ” বইটা পড়া যেতে পারে।
পাশাপাশি এই প্রশ্নটাও রাখা যেতে পারে যে, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও কেন এই বইটা বাজারে পাওয়া গেল না?
ওয়াজেদ মিয়ার বইটাতে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের কুখ্যাত সেভেন মার্ডার প্রসঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। অন্তর্কোন্দল ছিল মূলত মণি গ্রুপের সাথে রাজ্জাক গ্রুপের। শফিউল আলম প্রধান ছিলেন রাজ্জাক গ্রুপের। এজন্যই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
কে/কারা শেখ মুজিবকে বাকশাল কায়েমে প্ররোচিত করেছিল, ওয়াজেদ মিয়া বেশ সাধাসিধাভাবে তার স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন।
জনাব মাহফুজ আনাম, অরুণা সেনের নাম আপনার অজানা থাকার কথা নয়। কমিউনিস্ট এই নেত্রীকে রক্ষিবাহিনি ভয়ংকর নির্যাতন করেছিল। অরুণা সেনের জবানবন্দি পড়ে অনেকেই মত দিয়েছেন যে, রক্ষিবাহিনির ওই অত্যাচারের সাথে কেবল ও কেবলমাত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির তুলনা করা চলে।
সিরাজ শিকদারসহ ৩০,০০০ বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল মুজিব আমলে। প্রথম ডাকসু ইলেকশনেই ব্যালট ছিনতাইয়ের নজির সৃষ্টি করেছিল ছাত্রলীগ। সাথে ছিল ছাত্র ইউনিয়ন।
১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে ভিয়েতনাম সংহতি মিছিলে শেখ মুজিবের পুলিশ গুলি চালায়। এতে শহিদ হয়েছিলেন মতিউল-কাদের। এর জের ধরে পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে ডাকসুর পক্ষ থেকে তৎকালীন ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তুমুল করতালির মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব রহমানকে দেয়া জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রত্যাহার করে নেন এবং ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ বাতিল করেন।
আওয়ামীলীগের গুন্ডারা ন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয়। ন্যাপের তৎকালীন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিবাদ সভায় শেখ মুজিবের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে বলেছিলেন, “তুমি আর বঙ্গবন্ধু নও আজ থেকে তুমি বঙ্গশত্রু।” সেই সময় শাহরিয়ার কবির লিখেছিলেন, “মুজিব আর বঙ্গবন্ধু নয়, এখন থেকে মুজিব জনশত্রু”।
এরকম অসংখ্য ভয়ংকর ঘটনায় ঠাসা শেখ মুজিবের শাসনামল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫। মাহফুজ আনাম সাহেব, ওই সময় সম্পর্কে আপনার ক্রিটিক কোথায়? মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম প্রতিবিপ্লব মুজিববাদ তথা বাকশাল সম্পর্কে আপনি নীরব কেন?
বোঝা যায়, সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধ আর আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বয়ানের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। মুক্তিযুদ্ধ এ দেশের আপামর মানুষের; আপনাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক। জুলাই মাসে অভ্যুত্থান চলাকালে আপনি ডেইলি স্টারে কি লিখেছেন আমরা কিন্তু ভুলি নাই!
মাহফুজ আনাম সাহেব, আপনার বাবা আবুল মনসুর আহমদ সামনের দিনগুলোতে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন; অন্যদিকে, আপনার তেমন কোনো প্রাসঙ্গিকতা আগামীর বাংলাদেশে আমি দেখতে পাই না। আপনি রিয়েলিটি মাইনে নেন...
- Sarwar Tushar
No comments:
Post a Comment