৭১ এর ১লা মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনীরা হামলার জন্য নগ্ন প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমনকি,রংপুর থেকে ঢাকাতে ট্যাংক এনে চাকায় রাবার বেল্ট পড়ানো হচ্ছিল। শেখ মুজিব যখন ৭ তারিখে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনো বিমানবন্দরে অস্ত্র আসতেসিল।
বাংগালি সেনারা বুঝতে পারতেসিল, একটা হামলা আসন্ন। এই আশংকা তারা শেখ মুজিবের কাছে জানালে, মুজিব জানালেন,তিনি এসব জানেন!!
অর্থাৎ মুজিব ও অন্যান্য আওয়ামী নেতৃবৃন্দ সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে অবগত হলেও কোন পদক্ষেপ নেননি, ফলস্বরূপ ২৫মার্চ গণহত্যা শুরু হলে, মুজিব সবাইকে আত্মগোপনের পরামর্শ দিয়ে নিজে গ্রেফতার হলেন, কিন্তু উনার অনুপস্থিতিতে নেতা কে হবেন,সেটা বলে গেলেন না। ফলে নেতৃত্ব নিয়ে মুজিব পরিবার আর তাজুদ্দীনের গ্যাঞ্জাম যুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত ছিল।
আওয়ামী নেতৃবৃন্দের অথর্বতার এই দায়ভার আজকেও আমাদের টানতে হচ্ছে। কিভাবে??
যুদ্ধের ডিসিশন আসা উচিত ছিল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে, সামরিক বাহিনী জাস্ট সেটা পালন করবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে হয়েছে উলটা।
যুদ্ধের আগেই এদেশের জনতার মন থেকে পাকিস্তান উঠে গেসে, সামরিক বাহিনী ত মার্চের শুরুতেই কোর্টমার্শালের ঝুকি নিয়ে লীগের নেতাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকাইয়া ছিল, কারণ তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
মূলত মুজিব সহ অন্যান্য আওয়ামীনেতাদের স্বাধীনতার নিয়ে কনফিউশানের কারণেই ২৫ মার্চ গণহত্যা হয়ে গেল। যুদ্ধের সময়ও শেখ মনি গ্রুপ আর তাজউদ্দীনের স্থানীয় সরকারের অন্তর্কোন্দল শুরু হল। (কারণ মুজিব কোন নেতৃত্ব ঠিক করে দিয়ে যান নি।)
অন্যদিকে, যুদ্ধে হারলে বা আপোষ হলেই বাংগালি সেনাদের কোর্ট মার্শাল নিশ্চিত। ফলে তারা এই রিস্ক নিয়ে যুদ্ধ করল। দেশ স্বাধীনের পর তারা দেখল, কলকাতার ঘি মাখন খাওয়া আওয়ামী নেতৃবৃন্দ এসে স্বাধীন দেশে লুটতরাজ শুরু করে দিল। আর শেখমুজিব এসবে প্রশ্রয় দিতে থাক্লেন
হুমায়ুন আহমদ দেয়াল উপন্যাসে লিখসিলেন, কিভাবে এক লীগের রেপিস্টকে মুজিব মাফ করে দিসিলেন এবং তাকে গ্রেফতারকারী আর্মি অফিসারকে ট্রান্সফার করে দিসিলেন।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অথর্বতায় নিশ্চিত মৃত্যুঝুকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করা আর্মিদের একটা উচ্চাকাঙ্খা চলে এসেছিল স্বাভাবিক ভাবেই, অথচ তারা দেখল এই স্বাধীনদেশে তাদের কোন স্টেইক নাই, এই সময়ে আর্মির প্যারালালি রক্ষীবাহিনী গঠন করে আর্মিদের সাইডলাইনে পাঠায় দেয়া হল। একদিকে আওয়ামী নেতাদের লুটপাট, অন্যদিকে রক্ষীবাহিনীর মাধ্যমে আর্মিদের সাইডলাইণে পাঠায় দেওয়া, এসবে ফলস্বরূপ
৭৫ সালেই পরপর তিনটা সামরিক ক্যু হয়ে গেল।
৯০ সাল পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন ছিল, হয়েছে একাধিক ক্যু। কারণ দেশ স্বাধীন করা এসব আর্মিরা কেউ কারো অধীনস্ততা কেনই বা মানবে।
এই যে সংকট, এই সংকটের উতপত্তিই ছিল যুদ্ধ পুর্ব ও যুদ্ধকালীন সময়টাতে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের স্বাধীনতা সম্পর্কিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাব। ফলে সামরিক বাহিনীদেরই অনেক বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করতে হইসিল। এই যুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের এই ন্দ্বন্দের কাফফারা বাংগালি জাতিকে অনেকদিন ধরে দিতে হইসিল।
৭১ যুদ্ধের মাস্টারমাইন্ড কোন একক ব্যক্তি না, যারা একক ব্যক্তিকে মাস্টারমাইন্ড বানাতে চায় তাদের ইতিহাস দিয়েই লড়াই দেন। এই যুদ্ধের ছাত্র জনতার সবচেয়ে জরুরি ভূমিক ছিল, এরপরই ছিল সামরিক বাহিনীর ভুমিকা। ২৫ মার্চের পর কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিক বা না দিক, যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতই।(সেক্ষেত্রে যে দীর্ঘমেয়াদী একটা যুদ্ধ এই অঞ্চলে শুরু হয়ে যাইত, যার সাথে সেভেন সিস্টার+কলকাতার নকশালরাও মিক্স হয়ে ব্যাপারটা আরো তীব্র হয়ে যাইত, সম্ভবত এই কারণেই এই ছোট দেশের যুদ্ধে সোভিয়েত আম্রিকা দুই পরাশক্তিই এখানে এগ্রেসিভ ইন্টারফেয়ার করতে বাধ্য হইসে।)
- শান্তনু বোস
No comments:
Post a Comment