ঢাকার বিখ্যাত নাজিরাবাজার ও নাজির রোড নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

 ইসকনের ২টা তথ্য:


১/ ঢাবির শিক্ষার্থী ঐতিহাসিক নাজির আহমেদকে হত্যা করেছিল তারা। যার কারণেই ঢাকার বিখ্যাত নাজিরাবাজার ও নাজির রোড। ২ ফেব্রুয়ারী ঢাবিতে নাজির দিবস পালন হলেও ফ্যাসিবাদের মদদে তা বন্ধ হয়ে যায়।


২/ ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে 'মুসলিম' শব্দ বাদ দেয়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিল ইসকন। আর এটাতে সামনে ছিল সঞ্জিত দাস।


◾শহীদ নজীর থেকে 

     শহীদ আবরার 💕


“...পাকিস্তান আন্দোলনে বাংলার কতো জানা-অজানা তরুণ যে আত্মাহুতি দিতে এগিয়ে এসেছিল তাদের কয়জনের খবরই বা আমরা রাখি। যাদের নাম একদিন সারাদেশে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হতো, তাদের অনেকেই এখন বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে গেছে। বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া এমনি একটি নাম শহীদ নজীর আহমদ।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা নজীর আহমদের জন্ম নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমায়। নজীর আহমদ ছিলেন মেধাবী একজন ছাত্র, প্রচারবিমুখ একজন আত্মনিবেদিত সংস্কৃতিকর্মী। পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের সাথে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট নজীর আহমদ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক ‘পাকিস্তান’ নামক পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। এই পত্রিকায় পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে বিশিষ্ট সুধীজনদের রচনাদি নিয়মিত প্রকাশিত হতো। নজীর আহমদ একজন অমায়িক-আদর্শবাদী তরুণ হিসেবে হিন্দু-মুসলমান সকল মহলেই অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। নিজে কখনও পদ বা স্বার্থের পেছনে ছুটতেন না বলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম ছাত্রসমাজের অঘোষিত নেতা ছিলেন।


১৯৪৩ সালের প্রথমদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে আপত্তিকর একটি আইটেম সংযোজনের জন্য হিন্দু ছাত্রদের জিদকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মহলে নজীর আহমদ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন বলে তিনি এ বিষয়ে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সুরাহা করতে পারবেন - এই ভরসায় হিন্দু ছাত্রদের সাথে দেখা করতে যান। কিন্তু বুকভরা যে বিশ্বাস নিয়ে তিনি হিন্দু ছাত্রদের সাথে কথা বলতে যান, তারা সে বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারেনি। শান্তিকামী নজীরকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে হিন্দু ছাত্ররা তার পিঠে ছুরিকাঘাত করে বসে। আঘাত সুপরিকল্পিত ও কঠিন ছিল বিধায় ডাক্তাররা শত চেষ্টা করেও নজীরকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন। এভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ক্যাম্পাস প্রথম রক্তাক্ত হয় শহীদ নজীরের রক্তে। নজীর আহমদ শাহাদাৎ বরণ করেন ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। 


শহীদ নজীর ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে কত জনপ্রিয় ছিলেন তার প্রমাণ মেলে তার মৃত্যুতে প্রকাশিত দুটি স্মরণিকায়। এতে যাদের কবিতা ও অন্যান্য রচনাদি প্রকাশিত হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন কবি জসীমউদ্দীন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, সৈয়দ আলী আহসান, কাজী নাজমুল হক এবং আরও অনেকে।


১৯৪৪ সাল থেকে বহুদিন পর্যন্ত প্রতিবছর দোসরা ফেব্রুয়ারি ভাব-গম্ভীর পরিবেশে ‘শহীদ নজীর দিবস’ প্রতিপালিত হতো। ঢাকা শহরের নাজিরাবাজার এলাকায় শহীদ নজীরের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি উন্নতমানের পাঠাগার, যার নাম ছিল ‘শহীদ নজীর লাইব্রেরী’। ১৯৪৫ সালে আমি যখন ঢাকায় আসি, তখন ১৫০ নম্বর মোগলটুলীর পরই পাকিস্তান আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রাণকেন্দ্র ছিল নাজিরাবাজারে অবস্থিত এই শহীদ নজীর লাইব্রেরী।” [১]

—————————————

[১] আবদুল গফুর/আমার কালের কথা। [বিসিবিএস - ফেব্রুয়ারি, ২০০০। পৃ. ১৫৬-১৫৭]


◾কৃতজ্ঞতা: Kai Kaus

No comments:

Post a Comment

কথিত জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকে

⚠️ জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট  সিটিটিসি-র‍্যাব-এটিউ এর কথিত জঙ্গি-বিরোধী লড়াই যতটুকু না আদর্শিক, তার চেয়েও বেশি রিজিকের লড়াই। কথ...