গুম কমিশনের রিপোর্টে দুইটা ঘটনার কথা আলাদা ভাবে এসেছে।
১। ২০১০ সালে, ঢাকার ধানমন্ডি থেকে র্যাব এক যুবককে অপহরণ করে কোন অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া ঠোঁট সেলাই করে দেওয়া হয়। আপনি জাস্ট কল্পনা করেন। আপনাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোন প্রকার এনেস্থেশিয়া ছাড়া আপনার ঠোঁট ছিদ্রি করে সেলাই করে দেওয়া হচ্ছে।
২। দ্বিতীয় ঘটনায় ভুক্তভোগীর ওপর নানা শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়, বিশেষ করে তার কানে ও যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়।
_______
কমিশন জানতে পেরেছে গুমের শিকার অনেকেই আর জীবিত ফিরে আসতে পারেননি। তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। কমিশনের হিসাবেই গুমের শিকার ২৩% লোককে হত্যা করা হয়েছে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিকটিমদের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হতো এরপর মৃতদেহ সিমেন্টের ব্যাগের সাথে বেধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো যেন মৃতদেহ ডুবে যায়। বিশেষত সেনাবাহিনী থেকে যারা র্যাবে আসতেন তারা এই স্টাইলে গুম করতে বেশি পছন্দ করতেন। যেসব নদীতে এসব লাশ গুম করা হতো, তার মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদী। সেজন্য কাঞ্চন ব্রিজ ও পোস্তগোলা ব্রিজ ব্যবহার করা হতো।
( এই বিষয়ে আমার অগাস্টে লিখা পোস্টের লিংক কমেন্টে থাকবে। মিলিয়ে নিবেন।)
গুম হওয়া মানুষদের কিভাবে মারা হবে সেই বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ও আয়োজন করতো র্যাব।
এক সাক্ষীর কমিশনকে জানিয়েছেন, র্যাবের একটি "ওরিয়েন্টেশন" সেশনে তাদের সামনে দুজন ভিকটিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো। কমিশনের রিপোর্টে যে জিনিসটা আসে নাই..তা হচ্ছে পুলিশ থেকে কেউ র্যাবে গেলে..তাকে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হতো। এসময় তাদের কে নির্জন কোন স্থানে নিয়ে গিয়ে পয়েন্ট ব্লাংকে মানুষ খুন করে র্যাবের বিশেষ কিছু ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হবার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হতো। পুলিশের কিছু সদস্য যারা সরাসরি এধরণের কিলিং স্কোয়াডে জড়িত ছিলো তাদের কয়েকজন পরে স্বাভাবিক মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলে।।কমিশন সেসময় র্যাবে কর্মরত যে কোন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এদের খোঁজ পাবেন। এই মানসিক প্রাবে অস্বাভাবিক সদস্যরা এখনো পুলিশেই আছেন। একটু খুঁজলেই তাদের পাওয়া যাবে। এরা রাজস্বাক্ষী হতে পারে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমনেও পুলিশ থেকে গিয়ে র্যাবের কিলিং স্কোয়াডে কাজ করা কিছু সদস্যদের বিভিন্ন ইউনিফর্ম পরিয়ে নামানো হয়েছিলো।
আমরা যে অভাবনীয় হত্যা যোগ্য কিছু জায়গায় দেখেছি এর প্রায় সব গুলোর সাথেই সাবেক র্যাব এর কিলিং স্কোয়াডে কাজ করা সদস্যরা জড়িত ছিলো।
_________
এক সেনা সদস্য, যিনি র্যাবের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন, তার বরাতে গুম কমিশন জানিয়েছে যে এক ভুক্তভোগী নদীতে ঝাঁপিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাকে উদ্ধারের পর, সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে, এক সেনা সদস্য জানান, তাকে একটি লাশ নিয়ে ঢাকার রেললাইনের ওপরে রেখে ট্রেনের অপেক্ষা করতে বলা হয় যেন ট্রেনের চাপায় লাশটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এমনকি আরেক ভুক্তভোগীকে সড়কে চলন্ত গাড়ির সামনে ফেলে দেওয়ার হলেও গাড়িটি পাশ কেটে যাওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
গুমের ক্ষেত্রে সাধারণত এক দল অপহরণ করলে, অন্য দল আটকের কাজ করতো এবং তৃতীয় দল হত্যা বা মুক্তি দিতো।
অনেক সময় যারা এসব কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা জানতেনও না তারা কাকে এবং কেন হত্যা বা নির্যাতন করছে।
মানে আপনি একটা মানুষকে মেরে ফেলছেন...আপনি জানেনই না...তাকে কেন মারতেছেন!
_________
আটক অবস্থায় ভুক্তভোগীদের ওপর নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিছু নির্যাতনের ধরন ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ, যেমন পেটানো, বৈদ্যুতিক শক দেয়া।
সাধারণত র্যাব ও ডিজিএফআই-এর বিভিন্ন স্থাপনায় এসব নির্যাতনের সব বন্দোবস্ত ছিল বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। বিশেষ করে তবে সেনাবাহিনীর পরিচালিত বন্দিশালাগুলোয় নির্যাতনের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হতো, যার মধ্যে ছিল সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের জন্য ডিজাইন করা বিভিন্ন যন্ত্র।
গুমের জন্য ব্যবহৃত আয়নাঘর গুলোর কিছু এখনো অক্ষত আছে। বাকি বেশিরভাগ ভেংগে ফেলা হয়েছে।
গুম কমিশনের খুঁজে পাওয়া প্রায় সব গুলো আয়নাঘরের ডিজাইন ও একই ছিলো। দেখে মনে হবে পুরো জিনিসটা একজনের মাস্টারপ্লান।
______
বাংলাদেশ ভারতের যৌথ অভিযানের মাধ্যমেও গুমের ঘটনা ঘটতো। একাধিক আটক ব্যক্তি দাবি করেছে আয়নাঘরে তারা হিন্দি ভাষায় মানুষকে কথা বলতে শুনেছেন।
আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ- বিশেষ করে ভারতীয়দের জড়িত থাকার কথা কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সুখরঞ্জন বালি এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের ঘটনা এখানে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে।
এছাড়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হাম্মাম কাদের চৌধুরী তার বন্দিশালায় হিন্দি ভাষাভাষী লোকদের কথা শোনার কথা কমিশনকে জানিয়েছেন।
তার দাবি মুক্তির সময় তাকে বলা হয়েছিল: "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছেন, তবে কিছু
No comments:
Post a Comment