গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের ৭৬তম রিপাবলিক ডে প্যারেড বেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছি। অতঃপর দুটো সিগনিফিকেন্ট ইস্যু পরিলক্ষিত হয়েছে। এক. হিন্দুইজম ২. সিকিউরিটি
প্রথমে হি ন্দু ইজম ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলি
রিপাবলিক ডে প্যারেডে সাধারণত দেশটির আর্মড ফোর্সেসের শক্তিমত্তা, নতুন উদ্ভাবন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়; যা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু সেই বিষয়গুলির সাথে যদি ধর্মকে এলাইন করিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।
এতদিন যাবৎ ভারতের রিপাবলিক ডে প্যারেডে তাদের এনসিস্টরদের প্রতিকৃতি তৈরি করা হত, যাদের মাঝে টিপু সুলতান অন্যতম। কিন্তু এবার দেখতে পেলাম, টিপু সুলতানের কোনো প্রতিকৃতি নেই। বরং টিপু সুলতানের জায়গায় অধিক সাজসজ্জার বেশে শোভা পেয়েছে হি ন্দু দে র প্রধান দেবতা মহাদেব শিবের প্রতিকৃতি।
এরপর দেখলাম ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের ফ্লাইপাস্ট। সু-৩০ এমকেআই, মিগ-২৯, রাফালের মত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান অংশ নেয় উক্ত ফ্লাইপাস্টে।
এধরনের ওকেশনে বিমানবাহিনী সাধারণত নানান ধরণের এয়ার ফর্মেশন করে উপস্থিত জনতাকে মুগ্ধ করে।
এয়ার ফর্মেশনের মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্যাটেল স্প্রেড, ওয়াল, বক্স, ফিংগারটিপ, ব্যালবো, ইকেলন, ল্যাডার, ফ্লুইড টু, ফ্লুইড ফোর ইত্যাদি।
উক্ত এয়ার ফর্মেশনগুলোর প্রতিটিই সর্বোচ্চ চারটি বিমানের সমন্বয়ে করা সম্ভব। কিন্তু রিপাবলিক ডে প্যারেডে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্স তাদের ফ্লিটের সু-৩০ এবং মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দ্বারা মাত্র দুটো এয়ার ফর্মেশন করেছে। প্রথমত. ত্রিশূল এয়ার ফর্মেশন, দ্বিতীয়ত. ব্যাটেল স্প্রেড এয়ার ফর্মেশন
ত্রিশূল হলো তিন ফলা বিশিষ্ট এক ধরনের অস্ত্র, যা মূলত হিন্দু ধর্মে শুভ চিহ্ন হিসেবে পরিগণিত হয়। ঠিক তেমনিভাবে তিনটি সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধিমান দ্বারা আকাশে ত্রিশূলের মত সাইন আঁকা হয়েছে, যা হি ন্দু ইজমকেই প্রমোট করে। অন্যদিকে পাশাপাশি চারটি বিমানের সমন্বয়ে ব্যাটেল স্প্রেড এয়ার ফর্মেশন।
এই দুটো এয়ার ফর্মেশনকে কানেক্ট করলে অদৃশ্যমান একটি ম্যাসেজ হয়তবা ডিকোড করা সম্ভব।
স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের ইস্টার্ন ফ্রন্টের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এয়ার স্টেশন Jorhat এবং Bagdogra তে নতুনভাবে বেশকিছু সু-৩০ যুদ্ধবিমানের জন্য ‛এয়ারক্রাফট শেল্টার’ তৈরি করা হচ্ছে। তাদের এয়ারফোর্সের ইন্টেনশন হলো ইস্টার্ন ফ্রন্টের এই দুটো এয়ারবেস থেকেই যেন যুদ্ধকালীন মুহূর্তে একশো বিমান মুভ করানো যায়।
এবার যদি আমরা রিপাবলিক ডে প্যারেডের সু-৩০ বিমান, একই বিমান দ্বারা দুটো এয়ার ফর্মেশন দেওয়া; যার একটির ভাবার্থ হি ন্দু ধর্মের শুভচিহ্ন, অন্যটির ভাবার্থ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকা। এগুলোকে ক্যালকুলেট করলে রেজাল্ট ভারতের ইস্টার্ন ফ্রন্ট বা বাংলাদেশের দিকেই ইঙ্গিত করে। অর্থ্যাৎ তারা যে প্রস্তুতি নিচ্ছে- এই ম্যাসেজটাই পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়ত- সিকিউরিটি
ভারতের ৭৬তম রিপাবলিক ডে প্যারেডে তাদের বিভিন্ন ফোর্সের কন্টিনজেন্ট পারফর্ম করেছে। এদের মাঝে- এনএসজি, এয়ারফোর্সের গারুদ কমান্ডো, ৭ প্যারা এসএফ, ৯ প্যারা এসএফ, ১০ প্যারা এসএফ, ২১ প্যারা এসএফ, এয়ারবর্ন ইউনিট, প্যারাসুট রেজিমেন্ট, গোর্খা রেজিমেন্ট অন্যতম।
আমি তাদের ইউনিফর্ম, র্যাংক ব্যাজ, ইউনিট প্যাচ খেয়াল করলাম। স্পেশাল ফোর্স, এয়ারবর্ন এবং প্যারাসুট রেজিমেন্টের রেজিমেন্টাল প্যাচ চেন্জ হয়েছে।
আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন চেন্জ হলেই বা কি? হতেই পারে। কিন্তু বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ সহ আর্মড ফোর্সেসের প্রতিটি ট্রেনিং সেন্টারে শত্রুকে চিনতে একটা বই দেওয়া হয়। এটাকে খুব সম্ভবত GSTI অথবা GIST বলে। এই বইটিতে আমাদের সীমান্তবর্তী শত্রুদেশের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্টেশন, ক্যাম্প, বেসে কোন রেজিমেন্টের কোন ইউনিটের ট্রুপস ডিপ্লয়েড আছে তা সহজে জানার ব্যবস্থা করা থাকে। কিন্তু শত্রু যদি হুট করেই চুপিচুপি তাদের নতুন প্যাচ ইউনিফর্মে পরে, সেক্ষেত্রে আমরা স্বাভাবিকভাবেই Deception বা বিভ্রান্তির শিকার হবো।
তো এটাই আরকি। আমি যতটুকু দেখেছি, আগের রেজিমেন্টাল বা ইউনিট প্যাচের সাথে নতুনটির মিল নেই।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তার বডিগার্ড এবং প্রেসিডেন্সিয়াল এসইউভি
আপনারা কেউ লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা, তবে আমি লক্ষ্য করলাম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বুলেটপ্রুফ গাড়ির মডেল চেন্জ করেছেন। হাসিনার পতনের পরপরই আগস্ট মাসে নরেন্দ্র মোদি তার পূর্বের মার্সিডিজ বেঞ্জ এর প্রেসিডেন্সিয়াল এসইউভি পরিবর্তন করে ভারতের ইন্ডিজেনাস টেকনোলজির টাটা মোটরসের রেঞ্জ রোভার এসইউভি ব্যবহার করছেন। নিঃসন্দেহে নিরাপত্তার প্রশ্নেই এই পরিবর্তন।
এছাড়া মোদির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী 'স্পেশাল প্রটেকশন গার্ড' (এসপিজি) তাদের অস্ত্র পরিবর্তন করেছে। এর আগে তারা ইসরাইলি TAR-21 সহ মার্কিন এবং জার্মানির হেকলর এন্ড কোচের কয়েকটি সিরিজের রাইফেল ব্যবহার করত। তবে এবার রিপাবলিক ডে প্যারেডে ক্লোজ কোয়ার্টার রেঞ্জে মোদির প্রটেকশনে থাকা এসপিজি সদস্যের হাতে বেলজিয়ামের তৈরি FN F-2000 এবং FN-90 সেমি অটোমেটিক রাইফেল দেখা গেছে।
কনক্লুশন টানলে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদি মেজর থ্রেট ফিল করছেন। তবে সিকিউরিটি এনশিওর করার জন্য যারপরনাই করছে সে।
আমি ইন্ডিয়ান আর্মড ফোর্সেসের বহু অফিসারকে নোটিশ করেছি। এমন একজনকে পাইনি যে কিনা হি ন্দু ইজমকে ঔন করেনা, যে কিনা শিবের ভক্ত নয়, যে কিনা রামরাজ্য চায় না। এমনকি মুসলিম অফিসার পর্যন্ত'ও।
একজন মুসলিম অফিসারের উদাহরণ দেই― তার নাম কেফায়েত হোসেইন লন। তিনি 9 Para SF এর একজন এক্স স্নাইপার। পিলখানা হ ত্যা কান্ড কোনো কারণে ব্যর্থ হলে শেখ হাসিনাকে সেফ এক্সিট নেওয়াতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের এয়ারবেসে প্রস্তুত প্যারাসুট রেজিমেন্টের দায়িত্বে থাকা কমলদ্বীপ সিং এর ব্যাচমেট তিনি। এছাড়াও রিটায়ার্ড ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসার কর্নেল সিভেন্দ্র প্রতাপ সিং কনোয়ার― যাকে আপনারা বিভিন্ন পডকাস্টে দেখেন, কাশ্মীর ভ্যালিতে দায়িত্বে থাকাকালীন তার সাথে 9 Para SF এর স্পেশাল উইং ‛A-TEAM' এর হয়ে বহু কাশ্মীরি মুজা হিদ কে হ ত্যা করেছে এই কিফায়াত হোসেইন লোন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ার অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান SSS Defence এর চিফ সিকিউরিটি অফিসার (CSO)
অর্থ্যাৎ দেখা যাচ্ছে ভারতের অস্তিত্ব বা হি ন্দুইজমের প্রশ্নে তারা সবাই এক।
কিন্তু আমাদের এক্স বা রানিং আর্মি অফিসার― কারো মাঝেই ইসলামিজম নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তাদের মাইন্ডসেট খুবই লিবারেল। রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টলিস্ট না হলেও অন্ততপক্ষে সীমিত পরিসরে ফান্ডামেন্টালিজম ঔন করা উচিত।
কে বা কারা জানি আমাদের বুঝিয়েছে, ইসলামকে স্ট্রংলি ঔন কইরো না। কারন সীমান্তের ওপারে কিছু পাগল মশাল হাতে খড়ের গাদার উপর দাঁড়িয়ে আছে, আর এরকম পাগল তোমার সীমানায়ও আছে। আর এটা বিশ্বাস করার মাধ্যমে আমরা ধরেই নিয়েছি, ওপারে আগুন জ্বললে এপারেও জ্বলবে। তবে এটি ভুল।
আমাদের একটি Radical শিফট দরকার। কারন চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে, শত্রু আমার র্যাডিক্যাল, একচেটিয়া এক্সট্রিমিস্ট।
Shafin Rahman
No comments:
Post a Comment