বৈষম্য বিরোধী শিবির থেকে সর্বশেষ ব্যক্তিও আজ রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন। শুরুতে দুই সমণ্বয়ক আঁট গাঁট বেধে নেমেছিল। পরবর্তীতে আরও সমণ্বয়করা একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক দলগুলোকে ভিলিফাই করে তাদের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছে, কেউ কেউ ইমোশনাল হয়ে চোখের পানিও ফেলেছে।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হবে জনগণের মধ্যে এমন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সে দল যদি সফল হয়, তবে বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে যাবে। নাহিদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে দেশের সংস্কার তাদের (রাজনৈতিক সরকার) অধীনেই হোক। তাই তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
প্রথমত, নাহিদ ইসলাম সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই সরকার ব্যর্থ হলে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে বিএনপি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে, নাগরিক কমিটি, বৈছাআ বিভিন্ন সময়ে বিএনপির বিরুদ্ধে যে ঢালাও বক্তব্য দিয়েছে তার বিপরীতে বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি বক্তৃতায় সরকারকে সফল হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকারের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করছেন।
নাহিদ ইসলাম দ্বিতীয় ভুলটি করেছেন, নতুন দল আসলে বিএনপির জন্য সমস্যা হবে এরকম চিন্তা করে। বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপির নিজের স্বার্থেই একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। বিএনপি নতুন নতুন বিরোধী দল গড়ে ওঠার স্পেস দিতে প্রস্তুত। বিরোধী দল গঠনে উৎসাহ দেওয়া বিএনপির ঐতিহ্য। জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতকে দল পুনর্গঠনে সাহায্য করেছিলেন। এই দুইটা দলই বিএনপির মূল প্রতিপক্ষ ছিল।
সংস্কারের প্রশ্নে তরুণ নেতৃত্বদের মধ্যে আবেগ এবং রোমান্টিসিজম বেশি দেখা যাচ্ছে।
তরুণ নেতৃত্বদের এই আবেগ এবং স্বপ্নের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু কিছু বিষয়ে তাদের বাস্তবসম্মত চিন্তার মধ্যে আসা উচিত।
পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউশন রাতারাতি তৈরি হয় না। বিবর্তনের মধ্য দিয়ে শক্তপোক্ত হয়। ডেমোক্রেসি ইজ অ্যা লিভিং ট্রি - বীজ থেকে চারাগাছ হয়ে একসময়ে বটগাছ হয়। কিন্তু আমাদের সেই ডেমোক্রেসির বীজ শেখ মুজিব হত্যা করেছেন, এরশাদ এসে গোড়া ভেঙে ফেলেছে। এরপরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এসে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলে সব নষ্ট করে ফেলেছে।
এখন আমাদের নতুন করে বীজ বুনতে হবে। চারাগাছ তৈরি হবে। সেটাকে যত্ন নিলে একসময়ে বটগাছ তৈরি হবে। নিরবচ্ছিন্ন চর্চা অব্যাহত থাকলে ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর পরে একটা শক্ত শেইপে আসতে পারে।
কিন্তু তরুণদের স্বপ্ন হচ্ছে, দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে, তাই সব তাৎক্ষণিক ঠিক করে ফেলতে হবে। আন্দোলন করা আর ইনস্টিটিউশন তৈরি করা এক কথা না। ইনস্টিটিউশন তৈরি করার জন্য উপরের দিক থেকে কমিটমেন্ট দরকার, আবার জনগণের মধ্যেও সংস্কার দরকার। আইনকানুন করে বা দলের হাইকমান্ড চাইলেও রাতারাতি করতে পারবে না।
জনাব নাহিদের দল বৃহত্তর আকার ধারণ করলে সেখানেও জনসংখ্যার সমানুপাতিক চোর - গুন্ডা - বাটপার ঢুকে পড়বে। ইতিমধ্যে টের পাওয়ার কথা। এই কালচার থেকে বের হতে সামাজিক সংস্কার, কালচারাল সংস্কার দরকার। এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে জনগণকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। ততদিন পর্যন্ত কি আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি স্থগিত রাখব?
একটা উদাহরণ দেই। সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন ও দক্ষ বিচারবিভাগ দরকার। বিচারবিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ প্রসিকিউশন। বাংলাদেশের প্রসিকিউশন সার্ভিস বেয়ার মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ডে আনতে খুব আন্তরিকভাবে কাজ করলেও কমপক্ষে পঁচিশ বছর লাগবে। এতদিন পর্যন্ত কি আমরা ভোট - নির্বাচন ছাড়া থাকব?
পৃথিবীর যেসব দেশে শক্ত গণতন্ত্র আছে, স্বাধীন ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের দেশগুলোতেও একশ দুইশ বছর আগে বড়ো বড়ো সিভিল ওয়ারের ইতিহাস আছে। লাখ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে এই ইনস্টিটিউশনগুলো দাঁড়িয়েছে। এই ইতিহাসগুলো পড়ে দেখলে আমাদের তরুণদের দুইটা উপকার হবে: এক। তারা তাৎক্ষণিক বড়ো ধরনের যে সংস্কারের স্বপ্ন দেখছে সেখান থেকে বাস্তবতায় ফিরে আসতে পারবে; দুই - তাদের হতাশা কমবে। তাদের যে স্বপ্ন তা বাস্তবসম্মত নয়, তাই যারা প্রকৃত অর্থে রিফর্মেশন চায় তারা ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে কাউকে কাউকে তেমন দেখছি।
আমি পরিশেষে ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার কথা বলব। তিনি দুই ভলিউমের একটা বড়ো বই লিখেছেন 'দ্য অরিজিন অব পলিটিক্যাল অর্ডার' নামে। ওই বইয়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি তিনটা লাইন উল্লেখ করব আমাদের তরুণ নেতৃত্বদের উদ্দেশ্যে:
"The struggle to create institutions was so long and so painful that people living in industrialised countries now suffer from a historical amnesia regarding how their societies came to that point in
No comments:
Post a Comment