মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার ১০টি কৈশল!

 নোম চমস্কি-মিডিয়ার মাধ্যমে “মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার ১০টি কৌশল”


এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে, নির্বুদ্ধিতাকে উৎসাহিত করা, অপরাধবোধ তৈরি করা, বিভ্রান্ত করা বা মনোযোগ ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া এবং কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করে এরপর যাদুকরি ভাবে সেগুলির সমাধান প্রস্তাব করা।

বিশ্বখ্যাত সমালোচক, এমআইটি’র আজীবন ভাষাতত্ত্ববিদ ও গত এক দশকে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিন্নমতের অন্যতম সেরা কণ্ঠ নোম চমস্কি মিডিয়ার মাধ্যমে কারসাজি করে গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য জনগণের মন ও মগজ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কমন কৌশলের তালিকা করেছেন।


ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যায়, গণমাধ্যম জনমত নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। মিডিয়ার নানা ধরনের লেখালেখি ও প্রচারণার ফলে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে বা ধ্বংস হয়েছে, অন্যায্য যুদ্ধ ন্যায্যতা পেয়েছে, অর্থনৈতিক মন্দা গোপন হয়েছে, নানা আদর্শিক আন্দোলন অনুপ্রেরণা পেয়েছে, এমনকি গণমাধ্যম সামষ্টিক চেতনায় বাস্তবতার উৎপাদক হিসাবেও কাজ করেছে।


কিন্তু নিজেদের অজান্তে আমরাও অংশ নেই, এমন মনস্তাত্ত্বিক টুলগুলি বোঝার জন্য সবচেয়ে কমন কৌশলগুলি আমরা কীভাবে শনাক্ত করব?


সৌভাগ্যক্রমে, চমস্কি নিজেই তার কাঁধে এই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। তিনি এই প্র্যাকটিসগুলির সংশ্লেষণ এবং মুখোশ উন্মোচন করেছেন। এসবের কিছু আছে খুবই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় এবং কিছু আছে গোপন। তবে সবগুলিই সমানভাবে কার্যকর এবং বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হীনকরও বটে।


এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে, নির্বুদ্ধিতাকে উৎসাহিত করা, অপরাধবোধ তৈরি করা, বিভ্রান্ত করা বা মনোযোগ ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া এবং কৃত্রিম সমস্যা তৈরি করে এরপর যাদুকরি ভাবে সেগুলির সমাধান প্রস্তাব করা।


১. মনোযোগ ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া


জনসাধারণের মন ও মগজ নিয়ন্ত্রণের একটি মৌলিক কৌশল হল বিভ্রান্তির কৌশল বা মানুষের মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কৌশল।


তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অনবরত সংবাদ প্রকাশ করে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা নিজেদের স্বার্থে যেসব পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, সেগুলি থেকে জনগণের নজর ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় এই কৌশলে।


বিজ্ঞান, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং সাইবারনেটিক্সের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের প্রতি জনগণের আগ্রহ প্রতিরোধ করার জন্যও মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করার এই কৌশল ব্যবহার করা হয়।


“জনসাধারণের মনোযোগ সত্যিকারের সামাজিক সমস্যা থেকে দূরে সরে গেছে, প্রকৃতপক্ষে কোনো গুরুত্ব নাই এমন জিনিস নিয়ে তাদেরকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে ব্যস্ত, ব্যস্ত, ব্যস্ত, ভাবার সময় নাই, খামার এবং অন্যান্য প্রাণীদের কাছে ফিরে যাও এমন ভাবে রাখতে হবে।” (Silent Weapons for Quiet War বইয়ের একটি উদ্ধৃতি)


২. সমস্যা সৃষ্টি করে সমাধান প্রস্তাব করা


এই পদ্ধতিকে ‘সমস্যা-প্রতিক্রিয়া-সমাধান’ পদ্ধতিও বলা হয়।


এই পদ্ধতিতে একটি সমস্যা তৈরি করা হয় এমন একটা ‘পরিস্থিতি’ তৈরি করে, যা জনসাধারণের মধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সুতরাং আপনি যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে চান সেসবের মধ্যে এটিই প্রধান। উদাহরণস্বরূপ: শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে যেতে ও তা তীব্রতর হতে দেওয়া বা রক্তাক্ত হামলার ব্যবস্থা করা, যাতে জনগণ নিজেরাই তাদের স্বাধীনতা খর্ব করে নিরাপত্তা আইন এবং নীতি বাস্তবায়নের আবেদন জানায়। অথবা, অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে দরকারি মন্দকাজ হিসেবে সামাজিক অধিকার এবং সরকারের জনসেবামূলক কর্মসূচী স্থগিত করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা।


৩. ধীরে ধীরে গ্রহণ করানোর কৌশল


অগ্রহণযোগ্য জিনিসকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সেটি ধীরে ধীরে একটানা কয়েক বছর ধরে প্রয়োগ করা। এই কৌশলেই মূলত ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে নতুন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা (নিওলিবারেলিজম) আরোপ করা হয়েছিল, যার বৈশিষ্ট্যগুলি হলো—রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল, বেসরকারিকরণ, অনিশ্চয়তা, নমনীয়তা, ব্যাপক বেকারত্ব, কম মজুরি এবং ভাল আয়ের গ্যারান্টি না থাকা।


ধীরে ধীরে এতগুলি পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছিল বলে আমাদের চোখে লাগে নি। কিন্তু সেগুলি যদি একবারে প্রয়োগ করা হতো, তাহলে তা একটি বিপ্লব হিসেবে গণ্য হত।


৪. সময়ক্ষেপণ কৌশল


কোনো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করানোর আরেকটি উপায় হলো সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন না করে ভবিষ্যতে বাস্তবায়নের কথা বলা এবং ভবিষ্যতের জন্য ‘বেদনাদায়ক ও প্রয়োজনীয়’ হিসাবে উপস্থাপন করা।


তাৎক্ষণিক ভাবে জবাই হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার বদলে ভবিষ্যতের উৎসর্গ মেনে নেওয়া সহজ।


প্রথমত, কারণ তাৎক্ষণিকভাবে তা ব্যবহার করা হয় নি। তারপরে, জনসাধারণ, জনগণের মধ্যে সবসময় নির্লিপ্ত ভাবে এই প্রত্যাশা করার প্রবণতা আছে যে, ‘আগামিকাল সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে’ এবং যে ক্ষতি প্রয়োজন, তা হয়তো এড়ানো যাবে।


এই কৌশলের মাধ্যমে জনসাধারণকে পরিবর্তনের ধারণায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় এবং যখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় আসে, তখন বিনা প্রতিরোধে গ্রহণ করার জন্য মানসিকভাবে তৈরি করা হয়।


৫. অবুঝ শিশু হিসেবে জনসাধারণের কাছে যাওয়া

No comments:

Post a Comment

কথিত জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকে

⚠️ জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট  সিটিটিসি-র‍্যাব-এটিউ এর কথিত জঙ্গি-বিরোধী লড়াই যতটুকু না আদর্শিক, তার চেয়েও বেশি রিজিকের লড়াই। কথ...