সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবার নাম ছিলো ফজলুল কাদের চৌধুরী। ফজলুল কাদের চৌধুরী শুরু থেকেই মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের স্পিকার এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফজলুল কাদের চৌধুরী খোলাখুলি ভাবেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি স্পষ্ট ভাবেই ছয় দফার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ ত্যাগের চেষ্টা করার সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হন।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ বিচারের জন্য কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।
____
ফজলুল কাদের চৌধুরী খোলাখুলি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বারবার দাবি করেন...তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সময় তিনি দেশে ছিলেন না। বা অপরাধের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন না।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে নিরপরাধ এটা প্রমাণ করার জন্য তিনি সর্বমোট ১০১৩ জন স্বাক্ষীকে আদালতে হাজির করার অনুমতি চান।
তাকে ৫ জন স্বাক্ষী হাজিরের অনুমতি দেওয়া হয়। তার রায়ের কপিও ফাঁস হয়ে যায়।
এই ট্রাইবুনাল নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে যায়। ফাঁস হওয়া এক অডিও টেপে জানা যায় এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আসলে অনেক প্রশ্ন তোলার জায়গা ছিলো।
ট্রাইবুনালের আদেশে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সাকা চৌধুরী প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলেন। সাকা চৌধুরীর পরিবার এটাকে মিথ্যা প্রপাগান্ডা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
____
সাকা চৌধুরীরা বংশগত ভাবে বনেদি পরিবারের ছিলেন। সাবের চৌধুরী তার আপন কাজিন। সালমান এফ রহমান এর সাথেও তার এক রকম আত্মীয়তার কথা শোনা যায়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সাথে শেখ হাসিনার বিয়ের প্রস্তাব একটি মাধ্যমে ফজলুল কাদের চৌধুরীর কাছে পাঠানো হয়েছিলো।ফজলুল কাদের চৌধুরী খুব তাচ্ছিল্যের সাথে এটা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর রেশ পাওয়া যায় পরবর্তীতে সংসদে এক তর্কাতর্কির সময়...শেখ হাসিনা যখন আংগুল নাচিয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের শাসাচ্ছিলেন...তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন-
- আংগুল দেখাবেন না! ওই আংগুলে আংটি পরাবার কথা ছিলো।
____
যদি আসলেই হাসিনার সাথে সাকা চৌধুরীর বিয়ে হতো সেটা একটা ডিজাস্টার হতে পারতো। কারণ দুই জনই বেফাঁস মন্তব্য করার জন্য বিখ্যাত। হাসিনার সাথে সাকা চৌধুরীর ইন্টারেকশন সেটাই শেষ না।
সাকা চৌধুরী তার ছেলের বিয়ের দাওয়াত দেবার জন্য শেখ হাসিনার বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে সগেখ হাসিনা অভিযোগ করেন সাকা চৌধুরীর নির্দেশেই তার উপর বোমা হামলা হয়েছে। সাকা চৌধুরী বিস্ময় মেশানো কৌতুকের সাথে জবাব দেন
- কিন্ত আমি বোমা মারলে তো ওই বোমা মিস হইতো না।
_____
৬ বারের সাংসদ সাকা চৌধুরী সংসদেও বেফাঁস মন্তব্য করার জন্য বিখ্যাত। জাতীয় সংসদ চলা কালে একবার স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন
- মাননীয় স্পিকার। বাজারে একটা নতুন মেশিন আসছে। মেশিনটার নাম কি জানেন?
- না
- মেশিনটার নাম আওয়ামী লীগ। এক পাশ দিয়ে যাই ঢুকান না কেন....আরেক পাশ দিয়ে সেটা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়।
আরেকবার এক সেশন চলাকাকে স্পিকার খুব সম্ভবত সাকা চৌধুরীকে ভাষা সংযত অথবা সংক্ষিপ্ত করার বিষয়ে বলেছিলেন। তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মন্তব্য করেন
- মাননীয় স্পিকার...আমি তো চোদনা হয়ে গেলাম
- সম্মানিত সংসদ সদস্য....আপনি ভাষা সংযত করুন।
- মাননীয় স্পিকার..আমি আবারো চোদনা হয়ে গেলাম।
এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে সাকা চৌধুরী বলে সম্বোধন করায় তিনি বলেন -
- আমি সাকা চৌধুরী হলে শেখ মুজিবকে কি শেমু বলে ডাকবেন?
নাম সংক্্ষিপ্ত করে ডাকার ব্যাপারে তার ছেলের ও আপত্তি ছিলো। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন
- আমার বাবাকে ডাকেন সাকা। আমারে কি ডাকবেন? হুকা? ( হুম্মাম কাদের চৌধুরী)
____
সাকা চৌধুরী বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন ১৯৯৬ সালে। খুব দ্রুত তিনি প্রভাবশালী হয়ে উঠেন বিএনপির রাজনীতিতে।
ফাঁসিতে ঝুলার আগ পর্যন্ত তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তার ফাঁসি বিষয়ে অনেকেই বলেন - ফাঁসিতে ঝুলাবার মতো পর্যাপ্ত স্বাক্ষী প্রমাণ তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি। কিন্ত শেখ হাসিনার পার্সোনাল আগ্রহের কারণেই তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়। আজকের এই দিনে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
_____
আমি আশা করবো সাকা চৌধুরীর পুরো বিচার প্রক্রিয়া রিভিউ হবে। আবার তদন্ত হবে।
ফেরেশতা হয়তো তিনি ছিলেন না। কিন্ত ন্যায় বিচার পাবার অধিকার তার ছিলো। যদি তার বিরুদ্ধে বিচারের কোন পর্যায়ে অন্যায় করা হয়ে থাকে...তার প্রতিকার তিনি পাবেন।
M Hassan
No comments:
Post a Comment