বাইবেল ও কোরানের পর সবচেয়ে বেশি অনুবাদ হওয়া বই কোনটি?

 পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ লক্ষ নতুন বই প্রকাশিত হয় বলে একটি পরিসংখ্যান বলছে। ইউনেস্কো অবশ্য ২০২৩ সালে সেলফ পাবলিশড বাদ দিয়ে সংখ্যাটা ২৫ লক্ষ মতো বলে জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো পৃথিবীতে এককভাবে সর্বোচ্চ বইয়ের লেখক কে? মার্কিট লেখক রোনাল্ড হাবার্ড নাকি প্রায় ১১০০ বই লিখেছেন।

প্রায় ৮০টির মতো ভাষায় অনুবাদ হয়েছে তার বই। সায়েন্স ফিকশন, ফ্যান্টাসির এই লেখক Scientology মুভমেন্টের উদ্যোক্তা। আজ দেখলাম আমার পুত্র আরহাম গল্পের প্রিয় লেখক এনিড ব্লাইটন প্রায় ৮০০টি বই লিখেছেন। তাঁর বই ৬০ কোটির বেশি বিক্রি হয়েছে। আধুনিক কল্পবিজ্ঞানের সুখ্যাত লেখক আইজ্যাক আসিমভ প্রায় ৫০০টির মতো বই লিখেছেন। নেটে দেখলাম স্প্যানিশ লেখক মারিয়া লোপেজ ৪০০০ উপন্যাস লিখেছেন। ব্রাজিলের রিওকি ইনোয়ি লিখেছেন ১১০০ বই। ভাবা যায়?? 


পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো বইটি কে লিখেছেন? 

বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বই হলো মার্সেল প্রুস্তের In Search of Lost Time। সাত খণ্ডে বইটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪২১৫। পূর্নাঙ্গ মহাভারত কত পৃষ্ঠার কেই বলতে পারেন? জানি না, তবে তামিল লেখক জয়মোহন ‘মহাভারত’কে উপন্যাসরূপে ২৬ খণ্ডে তামিল ভাষায় রচনা (অ্যাডাপটেশন) করেছেন। ২৫০০০ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটিই সম্ভবত পৃথিবীর দীর্ঘতম বই। 


আর সবচেয়ে ধনী লেখক?

বলা হয় জে কে রাউলিং সবচেয়ে ধনী লেখক। আশিটি ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রায় ৬০কোটি বই বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় ধনী লেখক জেমস প্যাটারসন, তৃতীয় জিম ডেভিস, চতুর্থ ডেনিয়েল স্টিল, পঞ্চম গ্রান্ট কারডান, সাত নম্বরে আছেন পাওলো কোয়েলহো, স্টিফেন কিং নয়ে এবং জন গ্রিশাম দশে।    


সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বই নিয়ে বিতর্ক আছে। বাইবেল ও কোরানের পরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের মধ্যে আছে দন কিহোতে (৫০০মিলিয়ন কপি), টেল অব টু সিটিজ, লর্ড অব দ্য রিংস, দ্য বুক অব মরমন, দ্য লিটল প্রিন্স, হ্যারি পটার, অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড, দা ভিন্সি কোড ইত্যাদি। 

সিরিজ হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে হ্যারি পটার, ঘুজবাম্পস, পেরি ম্যাসন, ডাইরি অব এ উইম্পি কিড। এককভাবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে সম্ভবত শেকসপিয়ার, এরপর আগাথা ক্রিস্টি (২ বিলিয়ন কপি), ডেনিয়েল স্টিল, হ্যারল্ড রবিনস, রাউলিং, এনিড ব্লাইটন, সিডনি শেলডনের মতো লেখকেরা। একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিক্রি হওয়া বই হ্যারি পটার, দিনে ৮৩ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। 


বাইবেল ও কোরানের পর সবচেয়ে বেশি অনুবাদ হওয়া বই হলো দ্য লিটল প্রিন্স। ৩৮৩ ভাষা ও ডায়লেক্টে অনুবাদ হয়েছে বলে নেট থেকে জানা যাচ্ছে। 


সবচেয়ে বেশি লেখক কোন দেশে?

জনসংখ্যার হিসেবে ভারত কিংবা চীনে হওয়ার কথা। জনসংখ্যার গড় হিসেবে আইসল্যান্ডে লেখক বেশি। মাত্র ৩ লক্ষ মানুষের দেশ, গড়ে প্রতি দশজনের একজন পাবলিশড্ অথোর। 


সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া বই কোনটি? 

ভিন্সির ৭২ পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি The Codex Leicester বিল গেটস ৩০.৮ মিলিয়ন ডলারে কিনেছেন। এখনকার হিসেবে বর্তমান মূল্য প্রায় ৬৩.৩ মিলিয়ন ডলার। তার মানে বর্তমান হিসেবে টাকায় ৭৫৬কোটি হয়!! এই টাকায় ঢাকায় ৬০০টা ফ্লাট কেনা যেত!! 


সবচেয়ে বেশি সময় ধরে লেখা বই কোনটি? আমি জানি না। তবে অভিধানকে ধরলে, 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' অভিধানটি তৈরি করতে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোটা জীবন লেগে যায়। আর নোয়াহ ওয়েবস্টার তাঁর প্রথম ডিকশনারী লিখতে সময় নিয়েছিলেন প্রায় ৩৬ বছর!! লর্ড অব দ্য রিংস লেখা হয় ১৭ বছরে।


আর সবচেয়ে বেশি চরিত্র আছে কোন বইতে জানেন? মহাভারতে সম্ভবত। এই মহাকাব্যে ১২০০-র বেশি চরিত্র আছে!


পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বই পড়েছেন কে?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব না। তবে চন্দ্র মোহন জৈন (আচার্য রজনীশ) দেড় লক্ষ বই পড়েছেন বলে দাবি করেছিলেন। যদি আমরা ধরে নিই যে তিনি ৪৮ বছর অবিচ্ছিন্নভাবে বই পড়েছেন (তিনি ৫৮ বছর বেঁচে ছিলেন), তাহলে বছরে গড়ে ৩০০০ বই পড়েছে। এইটা কতটা সম্ভব, সে প্রশ্ন তো থেকেই যায়। তাছাড়া কেউ গুণে বই পড়ে না, যারা পড়েন তারা সেটা প্রকাশও করেন না।


বাংলাদেশে সর্বাধিক সংখ্যক বইয়ের লেখক কে হবেন বলে আপনাদের ধারণা: হুমায়ূন আহমেদ, আমীরুল ইসলাম, আসলাম সানী? নাকি অন্য কেউ? তবে পৃথিবীতে একজন ব্যক্তিকে সর্বাধিক সংখ্যক বই উৎসর্গের রেকর্ড সম্ভবত বাংলাদেশে। শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ভাই শিশুসাহিত্যিক ও প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব দাকে ত্রিশের অধিক বই উৎসর্গ করেছেন, ধ্রুদ দাও অধিকাংশ বই আমীরুল ভাইকে উৎসর্গ করেছেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা-লেখক রমা চৌধুরীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলাপে জানতে পেরেছি, তিনি তাঁর ৮টি বই উৎসর্গ করেছেন তাঁর ৮ বেড়ালকে। এক্ষেত্রে রেমন্ড চান্ডলার আরো একধাপ এগিয়ে। তিনি তার বেড়াল টাকিকে তার সেক্রেটারি হিসেবে পরিচিত করিয়ে দিতেন।

No comments:

Post a Comment

বিশ্বের দ্বিতীয় সামরিক পাওয়ারহাউজ এখন সৌদি আরব। বেকায়দায় যুক্তরাষ্ট্র।

 এমবিএস Diplomacy: ব্যক্তিগত সার্কেলে আরও ৫-৭ বছর আগে থেকেই আলোচনা করেছিলাম অতিসত্বর এমবিএস তথা সৌদি আরব বিশ্ব অর্থনীতি, কূটনীতি ও সামরিক পা...