অভ্র টিমকে একুশে পদক দেওয়ার পর আমি বোধ করি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের একটা দায়িত্ব পূর্ণ হয়েছে।
আমি আজকে আরেকটা মানুষের কথা বলব, যে মানুষটা মেহদি ভাইয়ের মতই নিভৃতে থাকে। নিভৃতে চলে। অথচ ফনেটিকের শুরুর দিকে ফাইটটা তাকেও করতে হইসে।
মোস্তফা জব্বারের রোষানলে যে কয়টা মানুষ বিপর্যস্ত ছিল তার মধ্যে এই মানুষটাও আছে।
আমি সেই সময়ের কথা বলব, যেই সময়টায় সবার হাতে এন্ড্রয়েডও ছিল না। যাদের ছিল, তাদের মধ্যে সবার সেট আবার ইউনিকোড বাংলা সাপোর্টও করত না।
সেই সময়ে গুগল প্লে স্টোরে বাংলাদেশিদের অ্যাপও ছিল হাতে গোনা এক দুইজনের।
হ্যাঁ, এখন যেমন পাড়ায় মহল্লায় চিপায় চাপায় এন্ড্রয়েড ডেভেলপার ভুরি ভুরি পাওয়া যায়, সেই সময় এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করত এন্টায়ার বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক ছেলেমেয়ে।
এই যে আমি লিখতেসি, সেটা কিন্তু মোবাইল ফোনে। মেহদি ভাইয়ের অভ্রতে না। অ্যাপটার নাম রিদমিক। শামীম হাসনাথের রিদমিক।
ল্যাপটপে কয়জন লিখে। মেজরিটিই লিখে মোবাইল ফোনে। আর বোধ করি অল্প কিছু মানুষ বাদে মেজরিটি মানুষ মোবাইলে বাংলা লিখে এই অ্যাপে।
সেই ২০১২ বা ২০১৩ এর দিকে তখন প্লে স্টোরে বাংলা লেখার অ্যাপ ছিল দুইটা - রিদমিক আর মায়াবী। ব্যস।
মায়াবী এর ইউজার ইন্টারফেইস থেকে রিদমিক ছিল ফার বেটার। তাই ইউজারও ছিল বেশি।
সেসময় জিবোর্ড বা গুগলের ফনেটিক বাংলাও ছিল না।
অভ্র যেমন ইউনিজয় লেআউট নিয়ে আসছিলো বিজয়ে অভ্যস্তদের সহজ ইউজের জন্য, রিদমিকেও ছিল এই ইউনিজয় নামের লেআউট।
আর এটাকেই কপি রাইট ক্লেইম দিয়ে প্লে স্টোর থেকে সরায়ে দিসিলো মোস্তফা জব্বার। কী পরিমাণ জিঘাংসা থাকলে মানুষ এই কাজ করে।
যেখানে মোবাইলে বাংলা লেখার অ্যাপ ছিল হাতে গোনা এই কয়টা।
আর এই অ্যাপে "অভ্র" অপশনকে অভ্রের মেহদি ভাইও যেখানে কপি রাইট ক্লেইম দেন নাই কারণ মেধার বিকাশ হোক, সেখানে এই জব্বার লোকটা তার সন্তানতুল্য ছেলেটার সৃষ্টিশীল কাজকে মুছেই দিল প্লে স্টোর থেকে।
রিদমিককে ফিরতে দেরি হয় নাই। ইউনিজয় মুছে নতুন করে আপলোড হল রিদমিক। এক সপ্তাহ না যেতে সেটার ডাউনলোড ছুঁয়ে গেল মিলিয়নে।
মোস্তফা জব্বারের সাথে যখন এই টানাপোড়েন, তখন শামীম হাসনাথ মাত্র বুয়েটের স্টুডেন্ট।
এখন অজস্র বাংলা কীবোর্ড আছে। গুগলেরও আছে।
কিন্তু মোবাইলে যখন লিখতে বসি, তখন খুব সহজেই আমরা ভুলে যাই শুরুর দিকের বাংলা লেখা নিয়ে ফাইট দেওয়া এই যোদ্ধার কথা।
যেই ছোট্ট ছেলেটার অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইলে আমাদের বাংলা লেখার হাতেখড়ি, সেই মানুষটার নাম আমরা ঠিক কতজন জানি।
- Dr. যুবায়ের আহমেদ
No comments:
Post a Comment