ঢাকায় দিন দিন ছিনতাইকারীর সংখ্যা বাড়ছে।

 চাকরির কারণে কক্সবাজার থাকার ফলে অনেকদিন পর পর ঢাকায় আসা হয়। গত ৪/৫ দিনে ঢাকায় অদ্ভুত একটা পরিবর্তন দেখলাম, এই পরিবর্তনের সাথে আমার চেনা গত ৩৬ বছরের ঢাকার কোনো মিল নাই!

এই নতুন পরিবর্তনে আমি আতংকিত, শংকিত, ভীত! কারণগুলো শেয়ার করলাম, এটা একান্তই নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা...


প্রথমটা হলো এই শহরে রিক্সা বেড়েছে, এটাকে শুধু বেড়েছে না বলে বলা উচিত বাড় বেড়েছে! নরমালি চারদিনের ছুটি পেলে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়, তার উপরে ডিসেম্বর মাস, বাচ্চাদের স্কুল ছুটি, ঢাকা আরো খালি হয়ে যাওয়ার কথা! অথচ ঘটনা ঘটেছে পুরোপুরি উল্টো; রিক্সার জ্যামের কারণে ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে রাস্তায়! 

এবার আসি এদের আচরণ নিয়ে; আগে সিএনজিওয়ালারা পাঠাও, উবারের বা যেকোনো মোটরসাইকেলকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতো, এবং রাস্তাঘাটে পারলে চাপায়ে দিতো, এই শহর গত কয়েক বছরে সেটাকে এক প্রকার মেনে নিয়ে একটা আন্ডারস্ট্যান্ড্যিং এ চলে এসেছে, কিন্তু ঝামেলা বাঁধালো নব্য অট রিক্সাচালকরা! তারা একই সাথে মোটরসাইকেল, সিএনজি, বাস এবং প্রাইভেটকারকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা শুরু করলো, একটা অটো রিক্সায় সিএনজির চাইতে বেশি লোক উঠতে পারে এবং চালকের পাশেও আরাম করে এক দুইজন বসতে পারে-এই সুযোগটা লুফে নিলো ঢাকার সাধারণ মানুষ, কম টাকায় পুরো পরিবারসহ অটো রিক্সায় চেপে বসেন! এই অটো রিক্সা এখন রাস্তার বাম পাশে তো কাউকে সাইড দেয়ই না, উল্টো ডান পাশে যেখানে দ্রুতগামী বাহন চলার কথা সেখান দিয়েও বীরদর্পে রাস্তা কাঁপিয়ে বেড়ান। মজার ঘটনা অন্য যায়গায়; মোটরসাইকেল বা সিএনজিওয়ালারা তাদের গাড়ি থেকে নেমে অন্যের সাথে মারামারি করেন না এবং তাদের মুখের ভাষাও অনেক বেশি সংযত - সেই তুলনায় অটোরিক্সাওয়ালাদের এসব মান ইজ্জতের কোনো ভয় নাই, ফলে তাদের হাতে গালি খাওয়ার ভয়ে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল এবং সিএনজিওয়ালারা তাদের সাথে বিবাদে জড়ান না, এই সুযোগে অটো রিক্সা রাস্তায় যেভাবে মন চায় চলছে, হর্ন দিলেও কোনো গা করে না, সাইড তো দেয়ই না, উল্টা হুটহাট ডানে-বামে রিক্সা ঢুকিয়ে পেছনে কেয়ামত বাঁধিয়ে দেয়।


এবার আসি পরেরটা নিয়ে...

গত কয়েক মাসে ঢাকা শহরে নির্দিষ্ট বাজার বলতে কিছুই নাই, প্রতিটা রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন বাজার, বলতে গেলে পুরো রাস্তা জুড়েই ভ্যানগাড়ি বসিয়ে মাছ, মাংস, সবজি, ফল বিক্রি চলছে। একদম হাতের নাগালে হওয়ার কারণে সাধারণ ক্রেতারা খুব খুশি, ঘর থেকে বের হয়ে দুই পা ফেলার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে যাচ্ছেন। এবং এদের ভ্যান সকাল ১০টার আগেই খালি হয়ে যায়। এখানে ফ্রেশ সবজি দেয়ার বাহানায় তারা বেশিরভাগ যায়গায় দোকানের চাইতেও দাম বেশি রাখে। এরকম যত্রতত্র বাজার হয়ে যাওয়ার ফলে পুরো ক্রেতা-বিক্রেতা ব্যবস্থা অথবা শহরের বাজার কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে!


এবার আসি মূল উদ্বেগটাতে...

গত কয়েক মাসে অটোরিক্সা এবং ভ্রাম্যমাণ বাজার বেড়ে যাওয়াতে দেশের বিভিন্ন এলাকার অগণিত মানুষ কাঁচা টাকা উপার্জনের আশায় ঢাকায় ঢুকেছে, জীবিকা খুঁজতে খুঁজতে পরিবারসহ ঢাকায় স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ঢাকায় বেড়েছে মানুষের চাপ, আগে যদি ঢাকায় দুই কোটি মানুষ থাকতো, এখন সেটা চার কোটি হলেও অবাক হবো না। ঢাকার রাস্তায় বাতাসের অভাব থাকলেও মানুষের কোনো অভাব নেই। 


এই ভ্যান বিজনেসম্যানরা দিনের বাকিটা সময় কি করে? কিংবা এই অটোরিক্সা চালকরা যখন ব্যাটারি চার্জে দেয়, তখন কি করে? এদের ঢাকায় কোনো কুটুমবাড়ি নেই, এরা টাকা কামানোর জন্য ঢাকায় এসেছে, চুপচাপ শুয়ে বসে থাকার জন্য না। একটু চিন্তা করে দেখেন, এরা অবসর সময়ে বা মূল কাজের বাইরের সময়ে টাকা ইনকামের জন্য কি কি করতে পারে?


একদম ঠিক চিন্তাটাই করছেন, এরা অবসর সময়ে ছিনতাইতে নেমেছে...

আমার ইনটিউশন বলছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এরা পুরো শহরকে নরক বানিয়ে ফেলবে! কারণ এই শহরে কোনো বিচার এই মুহূর্তে নাই, একবার রাস্তা আটকে, আন্দোলন করে, ব্যারিকেড দিয়ে এরা বুঝে গেছে এই শহরে যা চাইবে সেটাই করা যাবে, কেউ কিছুই বলবে না। তার উপরে এরা একজোট, নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় এরা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দিতে প্রস্তুত! এরা এখন সন্ধ্যা নামলে ফ্লাইওভারে, পার্কের পাশে, অন্ধকার গলিতে কিংবা বিরান এলাকায় ছিনতাই করছে - কিন্তু সেদিন খুব বেশি দূরে নাই, যেদিন এরা দিনের আলোতে, বিজয়সরনির সিগন্যালে, এয়ারপোর্টের মোড়ে, চলন্ত ট্রেন থামিয়ে কিংবা জ্যামের মধ্যে উঠে ডাকাতি স্টাইলে ছিনতাই করবে না! এদের কোনো আগ পাছ নাই, এরা সরাসরি কোপ দিয়ে বসবে, ভয় আর আতংকের যে উন্মাদনা, সেটা দিয়েই এরা কামাই করবে! অন্যদিকে এক শ্রেনীর সাধারণ মানুষ এই ছিনতাইয়ের ঘটনা দূর থেকে জুম করে ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করবে, সেখান লাখ লাখ ভিউ হবে, তার টাকা আসবে সেইসব ভিউ থেকে, তার পোস্টে লোকজন আহা উহু করবে! কেউ নেমে গিয়ে ছিনতাই থামানোর চেষ্টা করবে না।

No comments:

Post a Comment

কথিত জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকে

⚠️ জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট  সিটিটিসি-র‍্যাব-এটিউ এর কথিত জঙ্গি-বিরোধী লড়াই যতটুকু না আদর্শিক, তার চেয়েও বেশি রিজিকের লড়াই। কথ...