আমাদের আমলাতন্ত্রকে ঢেলে সাজাতে হবে।

 আমার কথায় আমলাতন্ত্রের সাধারণ ক্যাডারের অনেকেই মন খারাপ করতে পারেন তবুও বলছি আমাদের দেশের রাজনীতি তো নষ্ট। আমরা অনেক কিছুর জন্যই তাই রাজনীতিবিদদের দায়ী করি। কিন্তু নোংরা রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অনিয়ম দুর্নীতি আর পিছিয়ে থাকার একটা বড় কারন এই কেরানিতন্ত্র যাকে আপনারা বলেন আমলাতন্ত্র। 


গতানুগনিতক পরীক্ষা পদ্ধতি আর জঘন্য মুখস্থ বিদ্যার বিসিএস আর কোটাতন্ত্র এই আমলাতন্ত্রের আরো ১২ টা বাজিয়েছে। বিসিএস দিয়ে মেধা তালিকার ৫০০ এর মধ্যে থেকেও চাকুরি পাবে না, আবার কোটার কারণে দুই হাজারতম হয়েও চাকুরির ব্যাবস্থা আমাদের পুরো আমলাতন্ত্রের মান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। পাশাপা‌শি সি‌স্টে‌মে সমস্যা, অ‌নিয়ম, দুর্নী‌তি, দলবা‌জি তো আছেই। 


আমি বলছি না প্রশাসনে সৎ মেধাবী লোক নেই, অবশ্যই আছে, কিন্ত ম্যা‌জিষ্ট্রেট মুনীর চৌধুরীর মতো লোকের সংখ্যা তো খুব বেশি নয় যারা সবসময় সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন। এর চেয়ে বরং আমাদের পুরো আমলাতন্ত্রটাই মানুষকে কষ্ট দেয়ার তন্ত্র। ব্রিটিশরা কেরানি বানানোর জন্য যে সিস্টেম এখানে চালু করেছিল আজো সেটি বহাল তবিয়তে টিকে আছে। ফলে সচিবদের কথা বাদ দিলাম এই দেশে অনেক সরকারি অফিসের নিম্নপদের কেরানিরও লাখ–কোটি টাকা আছে। কারণ ওই কেরানিতন্ত্র। আর এই কেরানিতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বলি ডাক্তার-ইঞ্জিনয়ার কিংবা শিক্ষকরা। 


একবার ভেবে দেখেন, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারসহ বিজ্ঞানে বা ভালো কোন বিষয়ে পড়া তরুণেরা লেখাপড়া শেষে বুঝতে পারে, বাংলাদেশের চাকুরির বাজারটা ভিন্ন। বুয়েটের একদল ছেলে তখন দেশ ছাড়ে। ডাক্তাররা বিকল্প খোঁজে। আর গনিত কিংবা পদার্থবিজ্ঞান পড়া ছেলেটা কিছু করতে না পেরে কেরানি কিংবা ব্যাংকের টাকা গোনার চাকুরির জন্য লড়াইয়ে নামে কিংবা আমলা হতে চায়। এই হলো বিজ্ঞান পড়ার পরিনতি। 


একবার ভেবে দেখেন, আপনি ডাক্তার বা ইঞ্জিনয়ার যাই হন না কেন, আমাদের আমলাতন্ত্রে প্রশাসন বা পুলিশের হাতেই সব ক্ষমতা। এই আমলাতন্ত্র এতোটাই শক্তিশালী যে আরবি থেকে পাস করা লোক এখানে কৃষি কিংবা স্বাস্থ্য সচিব বনে যান। আর কৃষি বিজ্ঞান বা ডাক্তারি পড়া ছেলেটা উপজেলায় অমর্যাদায় কাটায়। অথচ আমি কোনভাবেই বুঝি না কৃষি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা কেন কৃষি সচিব হবেন না? কেন স্বাস্থ্য ক্যাডারের বদলে ইংরেজি পড়া ছেলেটিকেই স্বাস্থ্যসসচিব হতে হবে। কেন একজন শিক্ষক শিক্ষাসচিব হবেন না? এসব হতাশার কারণেই ওই কিন্তু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররাও সাধারণ ক্যাডারে যেতে চায়। 


অনেকেই বলতে পারেন, কোন সাবজেক্টে পড়েছে সরকারি চাকুরিতে সেটা বিষয় নয়। চাকুরি করতে করতে প্রশাসন ক্যাডারের লোকেরা যোগ্য হয়ে যান। হয়তো আপনারা ঠিক। তাহলে বলেন তো বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এতো বিষয়ের এতো সীট রাখার দরকার কী? এর বদরে উচ্চমাধ্যমিক পাস করিয়ে যথাযথভাবে চাকু‌রির প্রশিক্ষণ দিলেই হয়। 


ভেবে দেখেন সেনাবা‌হিনী যেমন উচ্চমাধ্য‌মিক পাস করা ছেলেমেয়েদের চাকুরি নিয়ে প্র‌শিক্ষণ দি‌য়ে অ‌ফিসার বানাচ্ছে আমরাও তাই করি। খামাকা পদার্থ গ‌নিত ডাক্তা‌রি পড়ি‌য়ে লাভ কী? কারণ সেই তো অনার্স–মাষ্টার্স পাস করে একটা চাকুরি পাবার জন্য ছেলেমেয়েদের সেই ভয়ঙ্কর লড়াইয়েই নামতে হবে। তার মধ্যে আবার সাধারণ ক্যাডারেই যেতে হবে। 


আমি তো মনে করি বাংলাদেশের আজকের অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান কৃষকের, কৃষি কর্মকর্তাদের। এরপর ব্যাবসায়ী, গার্মেন্টস শ্রমিক, স্বল্পশিক্ষিত প্রবাসী আর বিশাল বেসরকারি খাত। কিন্তু সেই খাতের মানুষগুলো কতোটা সম্মান পান? 


হ্যা, আমাদের আমলারাও এসব বোঝেন। অবসরে গিয়ে টেলিভিশন বা পত্রিকায় তারা নানা সংস্কারের কথা বলেন। আচ্ছা চাকুরি জীবনে কী এসব বুদ্ধি আপনাদের মাথায় আসে না? অবসরে গিয়ে যে স‌চিব কোটা সংস্কা‌রের কথা বলেন চাকুরিজীবনে তি‌নি হয়তো তার জন্য কিছুই করেননি। 


অবশ্য ৯০ এর পরে আমাদের আমলাতন্ত্র এখন এতোটাই বিভক্ত যে তারা সিদ্ধান্ত নেন দল চিনে। এখানে কর্মকর্তাদের মানের চেয়ে দলীয় যোগ্যতাই বেশি দেখা হয়। কাজেই তারা কতোটা ভূমিকা রাখতে পারেন সেটাও প্রশ্ন।


কেউ কেউ ভাবতে পারেন হঠাৎ করে কেন এতো কথা বলছি। সরকারি চাকুরি করা এক প্রকোশলী নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে হতাশ হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেটা দেখেই কথাগুলো মনে এলো। বেতন কাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক খুব ভালো উদাহরণ দিয়েছেন। তার মতে মাত্রাতিরিক্ত বেতন বাড়িয়ে এতো বেশি অপমান কেউ করেনি। 


বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কথা না হয় বাদ দিলাম তারা অনেক সুবিধা পান। কিন্তু এই দেশে যারা সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর সেই স্কুল শিক্ষকেরা কিন্তু সরকারি অফিসের অনেক পিয়নের চেয়ে কম বেতন পান। তাহলে কেন একজন মানুষ শিক্ষক হবে? ডাক্তার যখন তার পেশায় নানা সমস্যা তিনি কেন ডাক্তার থাকবেন? ফলে ডাক্তার-ইঞ্জনিয়ার-শিক্ষক সব বাদ দিয়ে দেশের তরুণরা সবাই একদিন সচিব হতে চাইবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।

No comments:

Post a Comment

কথিত জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকে

⚠️ জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট  সিটিটিসি-র‍্যাব-এটিউ এর কথিত জঙ্গি-বিরোধী লড়াই যতটুকু না আদর্শিক, তার চেয়েও বেশি রিজিকের লড়াই। কথ...