গোল্ডেন রুল অব একাউন্টিং কী? এস আলম ও ইসলামী ব্যাংক এর সাথে এর সম্পর্ক কী?

 মোট সম্পদ= মোট দায়+ মোট মূলধন।


এটাকে হিসাববিজ্ঞানের স্বর্ণসূত্র বলে। গোল্ডেন রুল অব একাউন্টিং।


একটা ব্যাংকের ক্ষেত্রেও


মোট দায়+মোট মূলধন= মোট সম্পদ।

মোট আমানত+অন্য দায়+ মূলধন = মোট ঋণ +অন্য সম্পদ।


একটা ব্যাংকের ব্যালান্স শীট যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন, ব্যাংকের সিংহভাগ দায় হলো ব্যাংকের সংগৃহীত আমানত। আর সিংহভাগ সম্পদ হলো ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ।


ছবিতে আমরা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ৩০.০৬.২০২৪ ভিত্তিক ব্যালান্সশীট দেখতে পাচ্ছি।


কালকে Rajon Rana ভাই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, ডলার নাহয় এস আলম নিয়ে গেছে, টাকা কই গেলো?


এই ব্যাংকের মোট আমানত ৪৫,৯৭৫ কোটি টাকা। মোট বিতরণকৃত ঋণ ৫৯,৩৭৯ কোটি টাকা।


সাধারণত ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের চেয়ে মোট বিতরণকৃত ঋণ কম হয়। কারণ, প্রথাগত ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট আমানতের ১৭% এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের ৯.৫% বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়।


ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক তার আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি দিয়ে ফেলেছে ১৩,৪০৪ কোটি টাকা। এই বেশি টাকা তারা কোথায় পেলো?


এই বেশি টাকা তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে! যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের মোট আমানতের ৯.৫% অর্থাৎ ৪,৩৬৮ কোটি টাকা জমা থাকার কথা, সেখানে জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের ধার ছিলো ১০,১২৮ কোটি টাকা।


যাই হোক, কাজের কথায় আসি।


ব্যাংকের কাজ দুটো- আমানত নেয়া আর ঋণ দেয়া।


ব্যাংক ঋণ দেয় আমানতের টাকা থেকে।


উপরের দুইটা কাজের একটা করে সম্পূরক কাজ আছে- আমানত ফেরত দেওয়া আর ঋণ আদায় করা।


ব্যাংক আমানত ফেরত দেয় কীভাবে?


নতুন আমানতের টাকা থেকে কিংবা ফেরত পাওয়া/ আদায় করা ঋণের টাকা থেকে।


এখন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না।


কেনো পারছে না?


কারণ দুইটা, এই ব্যাংকে মানুষ নতুন করে আমানত রাখছে না।


আর, এই ব্যাংক ঋণের টাকা আদায় করতে পারছে না।


মানুষ নতুন করে আমানত রাখছে না, এইটা না হয় বুঝলাম। এই ব্যাংক ঋণের টাকা ফেরত আনতে পারছে না কেনো?


এইখানেই রানা ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর আছে।


বিগত কয়েক বছর ধরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এস আলম কিংবা তার নির্দেশিত এনটিটি বাদে অন্য কাউকে ঋণ দেয়নি।


এস আলমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, তার আত্মীয়স্বজন, কর্মচারী, কাজের লোক, চটপটি- ফুসকাওয়ালাকে ঋণ তো দিয়েছেই, অজানা ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি, কল্পিত ব্যক্তি- এদেরকেও ঋণ দিয়েছে।


সেইসব ঋণের টাকা ডলার বানিয়ে সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর, দুবাই, কেইম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে পাচার করেছে এস আলম। এক আধ কোটি ডলার নয়, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।


এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন সাত ব্যাংক, জনতা ব্যাংক আর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে কমপক্ষে দুই লক্ষ কোটি টাকা ঋণের নামে লুটপাট করে সেগুলো বিদেশে পাঠিয়েছে ডলার বানিয়ে।


এইসব বেনামী ঋণ তো ফেরত দেওয়ার জন্য নেয়নি এস আলম। বেশিরভাগ ঋণ কীভাবে দেওয়া হয়েছে, সেটা খুঁজে বের করাই কঠিন হয়ে যাবে।


এখন আমানতও আসছে না, ঋণের টাকাও ফেরত আসছে না। ফলে, আমানতকারীদের টাকাও দিতে পারছে না ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।


আগামী দিনে এই সমস্যা আরো প্রকট হবে।


কারণ এখন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যালান্সশীটের অবস্থা হচ্ছে- 


লুটপাটকৃত সম্পদ= আমানতকারীদের দায় + মূলধন।


০= ৪৫,০০০ কোটি টাকা+ বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়+ ১১৫০ কোটি টাকা। (এটা অবশ্য কোনো সমীকরণ নয়, তবুও এটাকে সমীকরণ বলতে হচ্ছে)


টাকা কোথায় গেছে, বুঝতে পেরেছেন, রানা ভাই?


এরপরেও যারা বুঝতে চাইবেন না যে লুটপাট করে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেছে শেখ হাসিনা আর তার ধর্মপুত্তুরেরা, তাদের জন্য করুণা।


- চন্দন আজীজ

No comments:

Post a Comment

কথিত জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকে

⚠️ জঙ্গিদমনের আড়ালে মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট  সিটিটিসি-র‍্যাব-এটিউ এর কথিত জঙ্গি-বিরোধী লড়াই যতটুকু না আদর্শিক, তার চেয়েও বেশি রিজিকের লড়াই। কথ...