আওয়ামীলীগের নিবন্ধন বাতিল করলো সরকার।

 এক নির্বাহি আদেশে সরকার সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। 

এটার মানে হলো, দল হিসাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয় নাই। কিন্তু তার যে বিচার চলছে, সেই বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবেনা। একেবারে রাফলি যে কয়েকটা চিন্তা মাথায় আসলো, সেটা শেয়ার করি।

 


প্রথম কথা হলো, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগতো রাজনীতি করতেছে না। এই যে ৩২ ভাঙা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পোড়ানো থেকে যত মানুষকে মারা হইলো, আওয়ামী লীগ কিন্তু তার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নাই। 


জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী জুলাই থেকে আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৪০০ মানুষ যদি মারা যেয়ে থাকে, তাহলে অন্তবর্তী সরকারের তালিকা অনুযায়ী ছাত্রপক্ষের নিহত ৮০০’র একটু বেশি। বাকি ৬০০তো আওয়ামী লীগের। এর বাইরে পুলিশের হিসাব নাই। 


তো এই হত্যার প্রতিক্রিয়াতো আওয়ামী লীগ দেখায় নাই। গোপালগঞ্জ ছাড়া দুয়েকটা জায়গায় হুটহাট করে দুয়েকটা মিছিল করছে। এত বড় একটা দল হিসেবে এটাতো খুবই সামান্য! তাহলে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দরকার পড়লো কেনো? 


আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে গেলেন, সেই রাতে আইভি গ্রেফতার হলেন আর তার পর দিন থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি চলে আসলো, হামিদের দেশ ছাড়ার সাথে আমি এই দাবির ন্যূনতম সম্পর্কও খুঁজে পাইনা। কারণ এতদিনতো হামিদ দেশেই ছিলেন, তিনিতো পালাইয়া থাকেন নাই। তখন তাকে গ্রেফতার করা হলো না কেনো? 


আমার মনে হচ্ছে, প্রথম কারণ হলো, সাইবার স্পেস। ফেসবুকে আওয়ামী লীগ গত কয়েক মাসে যেভাবে ফিরে এসেছে, সেটা অবিশ্বাস্য! শুরুর দিকে এনসিপি ও সরকারের নানা খবরের নিচে হাহা রিয়েক্ট থাকতো এক তৃতীয়াংশ; গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেটা বেড়ে অর্ধেক বা কখনো কখনো দুই তৃতীয়াংশে চলে গেছে। 


বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে সরকার চালানোর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের এক্টিভিটি এ পরিমাণে বেড়েছে যে, সেইটা এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ের পরিমাণের চেয়েও বেশি। এতে সরকার ও কিংস পার্টি হিসেবে এনসিপিকে বিরাট চাপে ফেলেছে। 


এর সাথে যোগ হয়েছে প্রগতিশীল, নিরপেক্ষ সমাজ। এরা নানা কারণে আওয়ামী লীগের সময়ে সরকারের সমালোচনা করলেও, নারী, জনগণের নিরাপত্তা, করিডোর, রোহিঙ্গা, জামাতের উত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে এই সরকারের ব্যর্থতায় সরব হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নারীরা ইউনূস সরকার ও এনসিপি থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে। সেই প্রভাব এসে পড়েছে ফেসবুকে।


এখন সরকার ফেসবুকে সমালোচনা বন্ধ করবে কিভাবে? তারা হয়তো মনিটরিং করতে পারে। এলাকায় এলাকায় গুন্ডা লেলিয়ে দিতে পারে, ভয়ভীতি দেখাতে পারে। কিন্তু এই মেকানিজম কাজ করবে বলেতো আমার মনে হয় না। আওয়ামী লীগ সাইবার নিরাপত্তা আইন দিয়ে পুরা একটা এক্টিভ পুলিশ ফোর্স দিয়েতো পারে নাই। 


যেমন ধরেন, এক ঘণ্টা আগে লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা আসার পর থেকে আমি যে পরিমাণে ”জয় বাংলা” লেখা স্ট্যটাস দেখেছি, তার সিকিভাগও গত ৯ মাসে দেখি নাই। এখন এদেরকে গ্রেফতার করবেন? কয়জনকে করবেন? ক্যাম্নে করবেন?


দুই নম্বরটা প্রথমটার অপোজিট! সবকিছু খানিকটা সহনীয় হয়ে আসছে। সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট! লীগ ফিরে আসতেছে পুরা দমে। এখন যারা ক্লিজ ইমেজের আছে তাদেরকে দিয়ে লীগ আবার ফিরবে। যেমন ধরেন আইভি, আব্দুল হামিদ কিংবা বডি সোহেল। সরকার ওই অপশন দিতে চায় না। নিষিদ্ধ করে দিলে এট লিস্ট দলটা নতুন কমিটি দিতে পারবেনা। দিলেই এরেস্ট। নিষিদ্ধ দলের আবার কার্যক্রম কি? এইটা স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড থট। 


তিন বিষয়টা হলো, সরকার লীগের রেখে যাওয়া প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলো না। এখন প্রশাসনে থাকা লীগের লোকজন অপেক্ষাকৃত সম সক্রিয় থাকবে। কারন নিষিদ্ধ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে চাকুরি হারাতে পারে।


চারে যেটা মাথায় আসলো, সেটা হলো বিএনপি। নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি এখন একা হয়ে গেলো। এমনিতেই বিএনপিকে চাপে রাখছিল। সেই চাপ এবার বাড়বে। একটু সেদিক হলেই এরা বিএনপিকেও নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা করবে। মোটামুটি কয়েকশ জামাতি আর হেফাজতিকে দিয়ে দিন দুয়েক শাহবাগে বসাইয়া রাখলেই যেহেতু কাউকে নিষিদ্ধ করা যায়, তাহলে বিএনপির বিরুদ্ধে একই কাজ করতে অসুবিধা কই? তাছাড়া বিএনপিকে চাপে রাখা এমনিতেই সহজ। তবে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ভিতরে ভিতরে বিএনপি কি খেলছে জানিনা, কিন্তু বাইরে তারা যে ভূমিকা নিছে, সেইটা ম্যাচিউরড ছিল।


পাঁচে অবশ্যই করিডোর। ওইটা থেকে নজর সরানোর জন্য কি এতকিছু?


তাহলে ছয়ে প্রশ্ন আসে এই খেলা কি নির্বাচন বানচালের খেলা? ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার খেলা? আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে, বিএনপিকে সাইজে রাখা এদের জন্য সহজ। আওয়ামী লীগের ফর্মূলা ইউজ করলেইতো হয়! তাছাড়া যতদিন নির্বাচন নাই, ততদিন লুটপাট করা যাবে। যারা এখন লুটপাট করতেছে, তারা জানে যে তারা কোনোদিন ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। এটা ওয়ান্স ইন আ লাইফটাইম!

No comments:

Post a Comment

বিশ্বের দ্বিতীয় সামরিক পাওয়ারহাউজ এখন সৌদি আরব। বেকায়দায় যুক্তরাষ্ট্র।

 এমবিএস Diplomacy: ব্যক্তিগত সার্কেলে আরও ৫-৭ বছর আগে থেকেই আলোচনা করেছিলাম অতিসত্বর এমবিএস তথা সৌদি আরব বিশ্ব অর্থনীতি, কূটনীতি ও সামরিক পা...